ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

‘কক্সবাজারকে সুন্দর করার স্বপ্নটি প্রধানমন্ত্রীর বাল্যকালের’

ইমাম খাইর :
কক্সবাজারবাসী ও দেশী-বিদেশী পর্যটকদের স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভ সড়ক উপহার দিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার দুপুরে একদিকে পাহাড় আরেক দিকে সাগরের অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত ইনানী এলাকায় উপস্থিত হয়ে তিনি কলাতলী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটারের এই সড়কটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, পুরো এশিয়া মহাদেশের অহংকার। এতে করে কক্সবাজারের পর্যটনশিল্প এগিয়ে গেলো আরো কয়েক ধাপ। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সাথে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং অঅৗয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সেনা প্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক।
উপস্থিত ছিলেন- আলহাজ্জব সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, আলহাজ্ব আবদুর রহমান বদি এমপি, আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন প্রমুখ।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গি কয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রী ও সামরিক বেসামরিক উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি স্থানীয় নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকাল ১০টায় বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের উড়োজাহাজ মেঘদূত এ চেপে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।এসময় কক্সবাজারের সম্প্রসারিত রানওয়ে ব্যবহার করে নামার পর বিমানবন্দরে বড় আকারের উড়োজাহাজ চলাচল উদ্বোধন করেন তিনি। দুপুরে কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন।
১৯৯৬ সালে সেনাবাহিনী এই সড়ক নির্মাণ শুরু করে। কিন্তু নানা জটিলতা, বিশেষ করে উত্তাল সমুদ্রের ভাঙনের কারণে বারবার ব্যাঘাত ঘটে প্রকল্পের। ১৯৯৫ সালে একবার সড়কের একটি অংশ পুরোপুরি সাগরে বিলীন হয়ে যায়। এরপর সমুদ্র শাসন করতে হয়েছে। সড়কটি নির্মাণ করতে গিয়ে পাহাড় ধসে সেনাবাহিনীর ছয় জন কর্মী নিহতও হয়েছেন সড়কটি নির্মাণ করতে গিয়ে। তারপরও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উৎসাহ এবং সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ শেষ করতে পেরেছে নির্ধারিত সময়ের আগেই। সড়কের পাশে সব মিলিয়ে ১১ লক্ষ গাছও রোপন করা হয়েছে।
এই সড়কটি চালু হওয়ায় একদিকে যেমন স্থানীয় বাসিন্দাদের যাতায়াতে দুর্ভোগ কমবে ঠিক তেমনি একদিকে সাগর আর অন্যদিকে পাহাড়ের মাঝখানের এই সড়ক দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এই সড়ক নিয়ে আসবে অন্য এক সম্ভাবনা।
এর আগে সকাল ১০টায় বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের উড়োজাহাজ মেঘদূত এ চেপে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।এসময় কক্সবাজারের সম্প্রসারিত রানওয়ে ব্যবহার করে নামার পর বিমানবন্দরে বড় আকারের উড়োজাহাজ চলাচল উদ্বোধন করেন তিনি। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ অর্থাৎ সাগরপারের সড়ক। এর এক পাশে থাকছে নীল সমুদ্রের হাতছানি, অন্য পাশে থাকছে সবুজে ঘেরা বন-বনানী ও পাহাড়। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এই সড়কটিও যথেষ্ট আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা হয়েছে। পর্যটকরা যাতে সহজে কক্সবাজারে পৌঁছতে পারেন, সে জন্য এক হাজার ১৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এখন সুপরিসর বোয়িং বিমানও সেখানে ওঠানামা করতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ এই মেরিন ড্রাইভ, বোয়িং বিমানের চলাচল ও পাঁচটি ভবন উদ্বোধন করবেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ৯টি প্রকল্পেরও উদ্বোধন করবেন, যার মধ্যে রয়েছে নাফ নদের পাশে নাফ ট্যুরিজম পার্ক। কক্সবাজারকে পর্যটন অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে, তা একসময় দেশের চেহারাই বদলে দিতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
বর্তমান বিশ্ব অনেক বেশি প্রতিযোগিতাপূর্ণ। এই সময়ে কোনো দেশের পক্ষে অন্যকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়া মোটেও সহজ কাজ নয়। এ জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত পরিকল্পনা এবং নিজেদের সব সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো। বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই আজ এগিয়ে চলেছে। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে নিজের সমুদ্রসীমা নিশ্চিত করেছে। দেশ ক্রমেই ব্লু ইকোনমি বা সমুদ্র অর্থনীতির দিকে এগিয়ে চলেছে। সে ক্ষেত্রে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে পর্যটন খাতের অফুরন্ত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তা কাজে না লাগানো ছিল আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত দীর্ঘ সমুদ্রসৈকতে পর্যায়ক্রমে আরো অনেক পর্যটন সুবিধা গড়ে তুলতে হবে। চট্টগ্রাম থেকে মিয়ানমার সীমান্তের ঘুনধুম পর্যন্ত রেলওয়ে নির্মাণের কাজও ত্বরান্বিত করতে হবে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরের আধুনিকায়ন করতে হবে। জেলার সোনাদিয়া, মহেশখালীরও রয়েছে বিপুল পর্যটন সম্ভাবনা। সেটিও বিবেচনায় নিতে হবে। দেশের বিকাশমান পর্যটন খাতের বেসরকারি উদ্যোগগুলো যাতে সাবলীলভাবে এগিয়ে যেতে পারে, সেদিকেও নজর দিতে হবে।
পর্যটন খাতে আমাদের যেসব সম্ভাবনা রয়েছে, অনেক দেশেরই তা নেই। আমাদের রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও বিপুল জীববৈচির্ত্য। রয়েছে সুবিশাল হাওরাঞ্চল এবং দেশকে জালের মতো জড়িয়ে থাকা অসংখ্য নদ-নদী। তার পরও কেন আমরা পর্যটন খাতে পিছিয়ে থাকব? উপযুক্ত পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারে আজ যে যুগান্তকারী পদক্ষেপের সূচনা করছেন, আমরা আশা করব, সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এবং পর্যায়ক্রমে সারা দেশের সব পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে দেশব্যাপী একটি পর্যটন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে।

পাঠকের মতামত: